জেমস বন্ডের সবচে’ পছন্দের খেলা সম্ভবত মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই। আর মজার (!) এই খেলায় বিভিন্ন সময় তাকে সাহায্য নিতে হয়েছে বেশ কিছু গ্যাজেটস এর। নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পাশাপাশি অসাধারণ ওসব গ্যাজেটস এর কারিশমায় প্রতিবার জিতেও গেছেন তিনি।
গ্যাজেটস নির্বাচনে খুব দুশ্চিন্তায় কখনোই পরতে হয়নি বন্ডকে। এই গুরুদায়িত্ব সবসময় সূচারুভাবে পালন করেছেন ‘মিস্টার কিউ’ (জেমস বন্ড সিরিজের একটি নিয়মিত চরিত্র, তবে কোয়ান্টাম অফ সলিসে সম্ভবত চরিত্রটি বাদ পরেছে)। জনাব ‘কিউ’ এর পছন্দের গ্যাজেটস সম্ভারে গোপন বাক্স (স্পাই ব্রিফকেস) থেকে শুরু করে জেট প্যাক পর্যন্ত অনেক কিছুই ছিলো। কিন্তু বন্ড ভক্তদের নজর কেড়েছে কোনগুলো। সমপ্রতি পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এরকম ৫টি গ্যাজেটসের নাম। বন্ড সিরিজের নতুন ছবি ‘কোয়ান্টাম অফ সলিস’ মুক্তির ক্ষণে জেমস বন্ডের বিগত ২১ টি সিরিজে ব্যবহৃত সেরা পাঁচ গ্যাজেটসের বর্ণনা দেওয়া হলো:
স্পাই ব্রিফকেস
বন্ডের ব্যবহৃত গেজেটস এর সেরা পাঁচে স্থান পেয়েছে ১৯৬৩ তে মুক্তি পাওয়া ‘ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ’ ছবিতে ব্যবহৃত স্পাই ব্রিফকেস। এটাকে শুধুমাত্র ব্রিফকেস ভাবার Spy briefcase.gifকোন কারণ যে নেই; এটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যারা ছবিটি দেখেছেন। আর যারা এখনো দেখেননি তারা জেনে রাখুন, এটা ছিলো শত্রুকে ঘায়েল করার মোক্ষম কিছু যন্ত্রের সন্নিবেশ। আত্মরক্ষার জন্য বাক্সটিতে হাত দিলেই বন্ড খুঁজে পেয়েছেন ‘এ আর ৭.২২ রাইফেল’। এর দুরবীণে চোখ রেখে (ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ) রাইফেলটি দিয়ে বহু দূরের শত্রুকেও বন্ড ঘায়েল করতে পেরেছেন অনায়াসে।
ব্রিফকেসের একটি গোপন কোটরে রাখা ছুড়িটি দিয়ে নিঃশব্দে অনেক শত্রুকে পরপারে পাঠাতে পেরেছেন বন্ড। দর্শকরা সবচে’ অবাক হয়েছেন যখন তারা দেখেছেন এই ব্রিফকেসটি আসলে আস- একটি গ্যাস বোমা, যেটি একইসঙ্গে হাজার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারে অনায়াসে।
প্রয়োজনে যাতে নিজেকে শেষ করতে পারেন বন্ড, সে ব্যবস্থাও ব্রিফকেসটিতে রেখেছিলেন মিস্টার কিউ। তাই একটি সায়ানাইড ক্যাপসুলও ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ব্রিফকেসটির ভেতরে। অবশ্য ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডাই অ্যানাদার ডে’ ছবিতে পিয়ার্স ব্রসনান টয়লেটে ক্যাপসুলটি ফ্ল্যাশ করার পর আর কোথাও ব্যবহার করা হয়নি এই আত্মহননকারী ওষুধটি।
জেট প্যাক
‘জেট প্যাক’ (এক বিশেষ ধরণের যন্ত্র যা মানুষের পিঠে লাগানো থাকে এবং গ্যাসচালিত যন্ত্রটি ব্যবহার করে সে উড্ডয়ন করতে পারে) নামের এই গ্যাজেট ১৯৬৫ সালে মুক্তি পাওয়া বন্ড সিরিজের ছবি ‘থান্ডারবল’ -এ দেখা গেছে। ছবিতে কর্নেল বয়েভারের গোপন হত্যাকাণ্ডের পর বন্ড নিরাপদে ছিলেন এই বিশেষ ধরনের ‘বিমানে’ চড়ে। জেমস বন্ড মুভির অন্য সিরিজে বন্ডকে এই গ্যাজেট খুব কমই ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছেন মিস্টার কিউ।
ফোন বুথ ট্র্যাপ
১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া বন্ড সিরিজ ‘গোল্ডেন আই’তে ব্যবহার করা হয়েছে এই অদ্ভুত গ্যাজেট ‘ফোন বুথ ট্র্যাপ’। তবে পুরো ছবিতে বন্ডকে একটিবারের জন্যও এই গ্যাজেটটি ব্যবহার করতে দেখা যায় নি। এয়ারব্যাগ যুক্ত এই ফাঁদ ব্যবহার করে বিভিন্ন ফোনবুথ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে সবসময় ব্যস্ত দেখা গেছে মিস্টার কিউ এর এক সহযোগীকে।
মোবাইল ফোন
১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া বন্ড সিরিজ ‘টুমোরো নেভার ডাইজ’ ছবিতে বন্ডের পকেটে একটি ফ্লিপ ফোন ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন মিস্টার কিউ। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে পুরো ছবিতে একটি বারের জন্যও কথা বলার কাজে এই ফোন ব্যবহার করেননি বন্ড। কারণ, ফোনটি আসলে ছিলো একটি হাই ভোল্টেজের স্টান গান। পাশাপাশি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার এবং তালা খোলার যন্ত্র হিসেবেও কাজ করেছে এটি। ছবিটির বেশ কয়েকটি দৃশ্যে বন্ড তার বিএমডব্লিউ গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে রিমোট কন্ট্রোল হিসেবে ব্যবহার করেছেন এই ফোন।
অ্যাস্টন মার্টিন
‘টুমরো নেভার ডাইজ’ ছবিতে বন্ড ‘বিএমডব্লিউ’ গাড়ি ব্যবহার করলেও তাকে নিয়ে বেশিরভাগ সময় এখানে সেখানে ছুটেছে বিশ্বখ্যাত গাড়ি ব্র্যান্ড ‘অ্যাস্টন মার্টিন’। আজ পর্যন্ত নির্মিত জেমস বন্ড সিরিজের অনেকগুলো ছবিতে অ্যাস্টন মার্টিনের ‘ডিবি -৫’ মডেলের গাড়িটির দেখা পাওয়া গেছে। ’৬৪ সালে শন কনারি ‘গোল্ডফিঙ্গার’ ছবিতে প্রথম এই মডেলের গাড়ি ব্যবহার করেন।
সমপ্রতি পরিচালিত এক জরিপে বন্ডের ব্যবহৃত গাড়িগুলোর মধ্যে এই ‘অ্যাস্টন মার্টিন ডিবি -৫’ ব্রিটিশদের কাছে সেরা আইকনিক গাড়ির মর্যাদা লাভ করেছে। ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডাই অ্যানাদার ডে’ ছবিতেও এই গাড়িটি ব্যবহার করা হয়।
মিস্টার কিউ ‘ডাই অ্যানাদার ডে’তে ছুটে বেড়ানো অ্যাস্টন মার্টিনকে বৃটিশ প্রকৌশলদের শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন বলে দাবি করেছেন। এই গাড়িতে সন্নিবেশিত ছিলো একাধিক মেশিন গান, সহজে স্থানান্তরযোগ্য আসন এবং ভারোত্তলক। পাশাপাশি বন্ডের হাতে মিস্টার কিউ তুলে দিয়েছিলেন গাড়িটি নিয়ন্ত্রনের জন্য সঠিক ব্যবহার বিধির ৩০০ পৃষ্ঠার একটি বই।
ডেনিয়েল ক্রেইগ বন্ডের চরিত্রে অভিনয়ে নেমেই গ্যাজেটসের খরায় ভুগছেন (ক্যাসিনো রয়েল -এ )। কারন ‘ক্যাসিনো রয়েল’ থেকেই বন্ডকে অনেক বেশি মানবিক করার চেষ্টায় আছেন এই ছবিতে যুক্ত ক্যামেরার পেছনের মানুষগুলো। তবে ‘কোয়ান্টাম অফ সলিস’র লক্ষ্য নাকি একটাই – বন্ডকে অনেকটাই বদলে দেয়া। এই যখন লক্ষ্য, তখন প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বন্ডের গ্যাজেটস নিয়েও। আরও বেশি মানবিক বন্ড উপস্থাপন করতে গিয়ে পরিচালক মার্ক ফস্টার বন্ডের গ্যাজেটসগুলো ঠিক কিভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা জানতে ‘কোয়ান্টাম অফ সলিস’ দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
উৎস : বিডিনিউজ ২০০৮